ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে উদাহরণ স্বরুপ গল্প
নামকরা একটি স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক মোহাম্মদ উল্লাহ ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে পড়াচ্ছেন। তিনি মুখে সুন্দরভাবে লেকচার দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছেন কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আকর্ষিত করে মনোযোগী করতে পারছেন না। দশ মিনিট পর মোহাম্মদ উল্লাহ স্যার স্টুডেন্টদেরকে নিয়ে কমপিউটার ল্যাবে আসলেন। ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট সবাইকে মাথায় বিশেষ হেলমেট এবং হাতে বিশেষ গ্লাবস ও পায়ে বিশেষ যন্ত্রপাতিসম্পন্ন জুতো পরিয়ে দিলেন। ছাত্ররা প্রত্যেকে দেখল তারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এসেছে। সামনে বিশাল সমুদ্র। বিশাল বিশাল ঢেউ এসে তীরে আছড়ে পড়ার শব্দ। সমুদ্রের তর্জন গর্জন। শোঁ শোঁ বাতাস। পেছনে পাখির শব্দ। কোনো কোনো ছাত্র সমুদ্রের পানির দিকে এগুলো। আস্তে আস্তে পানিতে নেমে পড়ল কেউ কেউ। পায়ে পানির ঠাণ্ডা অনুভূতি পাচ্ছে তারা। কেউ নিচু হয়ে হাত দিয়ে পানি স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা পানির স্পর্শও অনুভব করল। সমুদ্রের তীর দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটল তারা। এইতো কিছুক্ষণ আগে তারা ক্লাসে যা পড়ল এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সবাই তা অনুভব করছে। এভাবে পনেরো মিনিটের মতো তারা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সমুদ্র সৈকতে বিচরণ করে বাস্তবে অনেক কিছু দেখতে থাকল। একসময় সব কিছু অন্ধকার। কমপিউটার ল্যাবের সহকারী তাদের সবার হেলমেট খুলে দিলেন। ছাত্ররা তন্ময় হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকল। এও কি সম্ভব! তারা স্বপ্ন দেখছে নাতো? ক্লাসের অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীরাও একই রকম তন্ময় হয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার ঘোর কাটল। মোহম্মদ উল্লাহ্ স্যার মুচকি হেসে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রশ্ন করলেন, কী তোমরা কোথায় গিয়েছিলে? সবাই সমস্বরে জবাব দিল- কক্সবাজার, স্যার।
Virtual Reality
এই হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। নিশ্চয় তোমাদের এখন জানতে ইচ্ছে করছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবে বাস্তবতা কিংবা কল্পবাস্তবতা বলে। একে সংক্ষেপে VR বলা হয়ে থাকে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিমুলেশন তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এতে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- Vizard, VRToolkit, 3d Studio Max, Maya ইত্যাদি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসম্ভব কাজও করা সম্ভব হয়। কল্পনার পাখায় ভর করে ইচ্ছে করলে চাঁদের মাটিতে হেঁটে আসা, প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চলে ঘুরে আসা, মানুষের মস্তিষ্কের নিউরাল সংযোগের উপর দিয়ে হাঁটা কিংবা জুরাসিক পার্কের সেই অতিকায় ডায়নোসরের তাড়াও খাওয়া যায়।
"Technology that enables users to enter computer generated worlds and interface with them three dimensionally through sight, sound, and touch."
ব্যবহার ঃ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একজন ব্যক্তিকে কোনোরকম শারীরিক ঝুঁকি বা বিপদ ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সম্প্রতি গুগলও Lively নামে ভার্চুয়াল চ্যাটিং সার্ভিস চালু করেছে যেখানে একটি ভার্চুয়াল কক্ষ বা পরিবেশে যে কেউ তার বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে প্রবেশ করতে পারে। সেখানে ইচ্ছেমতো বস্তু দিয়ে সাজানো, বন্ধুদের সাথে মারামারি, নাচানাচি, আবেগের গ্রাফিক্যাল প্রকাশ ইত্যাদি সম্ভব।
.
Event of Virtual Reality
★ফরাসি নাট্যকার, কবি, অভিনেতা ও নির্দেশক অ্যান্টোনিম আরচিউড (Antonim Artaud) এর ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ The Theatre and Its Double -এ তিনি সর্বপ্রথম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে Damien Broderick এর Thed Judas Mandala নামক সায়েন্স ফিকশনেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দটি ব্যবহার হয়।
• ১৯৬১ সালে মর্টন এল হেলিগ তার সেন্সোরামা স্টিমুলেটর নামক যন্ত্র দিয়ে প্রথম বাস্তব উপায়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে উপস্থাপন করলেও এর সাথে কমপিউটারের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
★ আধুনিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। ১৯৮৪ সালে হ্যাকার লেনিয়ার তার ভিপিএল রিসার্চ কর্পোরেশনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন যা আজকের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।

