What is Bioinformatics / জৈবতত্ত্ববিজ্ঞান
বিজ্ঞানি এবং গবেষকরা মানুষের কল্যাণার্থে আবিষ্কারের জন্য তাদের সারাজীবন ব্যয় করে থাকেন। তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় তৈরি হয় মূল্যবান অনেক তথ্য। সর্বদাই সমৃদ্ধ হচ্ছে এ তথ্যভাণ্ডার। অনেক সময় না জানার কারণে একই গবেষণার পুনরাবৃত্তি করে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। গবেষকদের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের গবেষণার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক তৈরির টুল প্রয়োজন হয়। ফলে নতুন কোনো বিষয়ে গবেষণা দ্রুত হয়। বায়োইনফরমেটিক্স এক্ষেত্রে তথ্য ইন্টারলিঙ্কিং করতে সহায়তা করে দ্রুত ফলাফল প্রদান করে। সময়ের সাথে সাথে জৈবতথ্যের পরিমাণ বাড়ছে। এক হিসেবে দেখা যায়, প্রতি পনেরো মাসে ডেটাবেজে জৈবতথ্য দ্বিগুণ হচ্ছে। তাই এ বিপুল পরিমাণের তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। জীববিজ্ঞানে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ হলো বায়োইনফরমেটিক্স। জীববিজ্ঞানের সমস্যাগুলো যখন কম্পিউটার প্রযুক্তি কৌশল (কম্পিউটেশনাল টেকনিক) ব্যবহার করে সমাধান করা হয়, তখন সেটাকে বলা হয় বায়োইনফরমেটিক্স।
Ask.com অনুসারে বায়োইনফরমেটিক্স-এর সংজ্ঞা - "বায়োইনফরমেটিক্স হলো বিজ্ঞানের সে শাখা, যা বায়োলজিক্যাল ডেটা এনালাইসিস করার জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তি, ইনফরমেশন থিয়োরি এবং গাণিতিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে। বায়োইনফরমেটিক্সে অন্তর্ভুক্ত ডেটাসমূহ হলো ডিএনএ, জীন, এমিনো এসিড এবং নিউক্লিক এসিড ইত্যাদি এবং এতে অন্তর্ভুক্ত বিজ্ঞানসমূহ হলো জীববিজ্ঞান, কমপিউটার ও অন্যান্য বিষয়ক।”
গত শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে যখন ডিএনএ-র গঠন জানা গেলো, বোঝা গেলো DNA এর গুরুত্ব, ক্রমাগত বাড়তে থাকলো জৈবতথ্য নিয়ে গবেষণা। বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ডিএনএ সিকোয়েন্সিং উদ্ভাবনের ফলে দ্রুত বাড়তে থাকলো এ জৈবতথ্যের সমাহার। তাই জীববিজ্ঞানে বাড়তে থাকলো গণকবিদ্যা বা কম্পিউটেশনাল টেকনিক, তথ্যবিদ্যা বা ইনফরমেটিক্সের প্রয়োজনীয়তা। জন্ম নিলো বায়োইনফরমেটিক্স। কম খরচে, পরিবেশের কম ক্ষতি করে বেশি উৎপাদনের পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য বিজ্ঞানীরা দ্বারস্থ হচ্ছেন বায়োটেকনোলজির। এখন পৃথিবীতে জয়জয়কার বায়োটেকনোলজির (জৈব প্রযুক্তির)। উৎপাদন খাতে বায়োটেকনোলজি দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেবে। বায়োইনফরমেটিক্স-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জৈবিক পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা। আর এ ধারণা লাভ করার জন্য অনেক হিসাব-নিকাশ করা হয়। যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে হিসাব-নিকাশ করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে প্যাটার্ন রিকগনিশন, ডেটা মাইনিং, যান্ত্রিক শিক্ষা ইত্যাদি।
বায়োটেকনোলজির প্রাসাদে ঢুকতে দু'টি দরজা লাগে। একটি হলো মলিকুলার বায়োলজি বা অণুপ্রাণবিজ্ঞান এবং আরেকটি হলো বায়োইনফরমেটিক্স। অণুপ্রাণবিজ্ঞান কাজ করে মূলত ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন ইত্যাদি নিয়ে। খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষিতেও বায়োইনফরমেটিক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অণুপ্রাণ বিজ্ঞানীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জেনম সিকোয়েন্সিং প্রজেক্টের ডেটাগুলোর তথ্য জানানো।কারণ, প্রথাগতভাবে গবেষণাগারে অণুপ্রাণ বিজ্ঞানীরা কাজ করত সীমিত ডেটা নিয়ে, কিন্তু প্রচুর সংখ্যক ডেটা নিয়ে কাজ করার জন্য এ গবেষণার সাথে কম্পিউটার যুক্ত করা হয়। কেননা সিকোয়েন্স জেনারেট করা, সাব-সিকোয়েন্স সংরক্ষণ করা, ডেটা রূপান্তর এবং বিশ্লেষণ ইত্যাদি সকল কাজই কম্পিউটার নির্ভর কাজ। তবে বিভিন্ন লেভেলে একটি অণু জৈব পরীক্ষা করার কাজটি খুব জটিল - বিশেষ করে genom, protcome, transcriptome এবং metabalome লেভেলে পরীক্ষণের কাজটি খুবই জটিল। বায়োইনফরমেটিক্স বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হলো বিশাল জৈবডেটার ভাণ্ডারকে সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষণ, এতে সহজ বিচরণ (Access) এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা প্রদানের দায়িত্ব পালন করা। যে কোনো ডেটা বিশ্লেষণের পূর্বে একেবারে অর্থহীন অবস্থায় থাকে। একজন প্রশিক্ষিত জীববিজ্ঞানীর পক্ষেও এটি নিয়ে ম্যানুয়েলি কাজ করা সম্ভব নয়। একারণেই বিভিন্ন জৈব ডেটাকে অর্থপূর্ণ জৈবতথ্য প্রদানের উপযোগী করতে কম্পিউটারের ডেটা প্রসেসিং টেকনিক ব্যবহার করা হয়। একটি বায়োইনফরমেটিক্স ডিভাইস সাধারণত তিনটি প্রধান কার্য সম্পাদন করে থাকে। যথা
1• ডিএনএ ক্রম থেকে প্রোটিন সিকোয়েন্স নির্ণয় করা
2• প্রোটিন সিকোয়েন্স থেকে প্রোটিন স্ট্রাকচার নির্ণয় করা
3• প্রোটিন স্ট্রাকচার থেকে প্রোটিনের কাজ নির্ণয় করা
বায়োইনফরমেটিক্স-এর প্রধান গবেষণাধীন এরিয়া হলো :
• Sequence analysis
• Genome unnotation
• Literature analysis
• Analysis of gene expression
• Analysis of protein expression •Analysis of mutations in cancer
• Comparative genomics
• High-throughput image analysis • Computational evolutionary biology
• Analysis of regulation
বায়োইনফরমেটিক্স সময় অনেক কমিয়ে অর্থ সাশ্রয় করে। যেমন- কোনো একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে পেপটাইড ভ্যাক্সিন তৈরি করা হবে। এ ভাইরাসের জন্য হয়তো একশটি পেপটাইড সম্ভব। পেপটাইড হলো এমিনো এসিডে সরলরৈখিক সিকোয়েন্স। কিন্তু এদের মধ্যে হয়তো দু'টি থেকে পাঁচটি পেপটাইড ভ্যাক্সিন হিসেবে কাজ করবে, বাকিগুলো করবে না। এখন এ একশটি এক্সপেরিমেন্ট ওয়েটল্যাবে (গবেষণাগারে বিভিন্ন রাসায়নিক রিএজেন্ট ব্যবহার করে পরীক্ষা) করতে গেলে বিশাল খরচ, পরিশ্রম এবং সময় লাগবে। এক্ষেত্রে বায়োইনফরমেটিক্স সহায়তা করে। যখন জৈবতথ্য নিয়ে কম্পিউটারের মধ্যে গবেষণা করা হয়, তখন তাকে বলে ড্রাইল্যাব। এখানে রিএজেন্ট (একপ্রকার রাসায়নিক বস্তু) প্রয়োজন হয় না। ড্রাইল্যাবে বিজ্ঞানীরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নানা ধরনের বিশ্লেষণ করে, ত্রিমাত্রিক মডেলিং, সিমুলেশন বিশ্লেষণ করে যারা কাজ করতে পারে সম্ভাব্য এমন দশটা পেপটাইড বের করে আনতে পারেন। অতঃপর ওয়েটল্যাবে একশতটি পেপটাইড নিয়ে কাজ না করে এ দশটি মাত্র পেপটাইড নিয়ে কাজ করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেতে পারেন। এভাবে বায়োইনফরমেটিক্স দশভাগ কাজ, সময়, পরিশ্রম ও অর্থ কমিয়ে দেয়। ধান, পাট, গমসহ নানাবিধ ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন, মিউটেশন ব্রিডিং বা সংকরায়ন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। সংকরায়ন পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত এক বা একাধিক গুণাবলি নির্ভর কয়েকটি জিনকে কোনো একটি জাতের মধ্যে আনা হয়। আর জটিল এ কাজটি সহজ করে দেয় বায়োইনফরমেটিক্স। তাই খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষিতে বায়োটেকনোলজির গুরুত্ব অপরিসীম।
বায়োইনফরমেটিক্স-এ ব্যবহৃত সফটওয়্যার টুলস
১. বায়োইনফরমেটিক্স-এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা মাইনিং, সফট কম্পিউটিং, ইমেজ প্রসেসিং, সিমুলেশন অ্যালগরিদম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
২. সফটওয়্যার টুলস হিসেবে এতে Java, C#. XML, Python, Perl C, C++, R. SQL CUDA, MATHLAB, Spreadsheet analysis ইত্যাদি এপ্লিকেশন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩. ওপেন সোর্স বায়োইনফরমেটিক্স সফটওয়্যার হিসেবে Bioconductor, Bioperi, Biojava, Bioruby, Bioclipse, EMBOSS, Taverne workbench, UGENE ইত্যাদি এবং ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।



